ভোমরা স্টেশনের সামগ্রিক সুবিধাদি বিবেচনায় সম্প্রতি গুঁড়ো দুধ ব্যতীত সকল প্রকার পণ্য আমদানির অনুমতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর ফলে বেনাপোল কাস্টম হাউসের উপর চাপ কমবে বলে মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত ভোমরা স্থলবন্দর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের একটি অন্যতম গেটওয়ে। ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের সামগ্রিক সুবিধাদি বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সম্প্রতি এই বন্দরের মাধ্যমে গুঁড়া দুধ ব্যতীত সকল প্রকার আমদানিযোগ্য পণ্য ভারত থেকে আমদানির অনুমতি প্রদান করেছে।
সেজন্য ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরের জারি করা এসআরও সংশোধন করে চলতি বছরের ২৯ আগস্ট নতুন এসআরও জারি করা হয়েছে।কর্মকর্তারা আরো জানিয়েছেন, ভারতের কোলকাতা হতে বেনাপোল কাস্টম হাউসের দূরত্ব ৮২ কিলোমিটার। আর ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের দূরত্ব ৭২ কিলোমিটার। কোলকাতা থেকে ভোমরা কাস্টমস স্টেশন পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থাও তুলনামূলক সহজতর।
অধিকন্তু ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত ব্যবস্থাও বৃহৎ পরিসরে আমদানি-রপ্তানির জন্য উপযোগী। পদ্মাসেতু চালু হওয়ার কারণে ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজতর হয়েছে।
এনবিআরের ঘোষণার ফলে বর্তমানে ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে অত্যাবশকীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য জরুরি পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে এবং সহজে আমদানি করা যাবে।
এনবিআর কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোমরা বর্তমানে একটি স্থল কাস্টমস স্টেশন হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
সরকারি আদেশের মাধ্যমে এটি অচিরেই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কাস্টম হাউস হিসেবে কার্যক্রম শুরু করবে। এ সংক্রান্ত কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কাস্টম হাউস হিসেবে কার্যক্রম শুরুর আগে এনবিআর প্রায় সকল আমদানিযোগ্য পণ্য এই বন্দরের মাধ্যমে আমদানি সুবিধা প্রদান করেছে।
জানা যায়, ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে আমদানিযোগ্য পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমসের সভাসহ বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের সভায় প্রতিনিয়ত ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে আমদানিযোগ্য পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনা হয়েছে।
এনবিআর সূত্রমতে, ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর এনবিআর ভোমরা কাস্টমস স্টেশন দিয়ে কোন কোন পণ্য আমদানি করা যাবে—তা নিয়ে এসআরও জারি করে। সে এসআরও অনুযায়ী এই কাস্টমস স্টেশন দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে তাহলো—গবাদি পশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছগাছড়া, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্রে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলকে, ব্যবহার্য কাঁচাতুলা, চাল, মসুর ডাল, কোয়ার্টজ, তাজা ফুল, খৈল, গমের ভুসি, ভুট্টা, চাউলের গুঁড়া, সয়াবিন কেক, শুঁটকি মাছ (প্যাকেটজাত ব্যতীত), হলুদ, জীবন্ত মাছ, হিমায়িত মাছ, পান, মেথি, মাছ, চিনি, মসলা, জিরা, মোটর পার্টস, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, রেডিও ও টিভি পার্টস, মার্বেল স্ল্যাব, তামাক ডাঁটা (প্রতিষ্ঠিত মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাঁচামাল হিসাবে আমদানীয়) শুকনা তেঁতুল, ফিটকিরি, অ্যালুমিনিয়াম এর টেবিলওয়্যার ও কিচেনওয়্যার, ফিস ফিড, আগরবাতি, জুতার সোল, শুকনা কুল, অ্যাডহেসিভ, ফ্লাই অ্যাশ, তাজা ও শুকনা ফলমূল, সকল প্রকার তাজা ও শুকনা ফলমূল, সকল প্রকার তাজা সবজি, শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ, ধনে, সকল প্রকার খৈল, ফায়ার ক্লে, থান ক্রে, স্যান্ড স্টোন, মার্বেল চিপস, ডলোমাইট, ফ্লোগোফাইট, ট্যালক, পটাশ ফেলসপার, গ্রানুলেটেড স্ল্যাগ, সোডা পাউডার, তিল, সরিষা, রেডিমেড গার্মেন্টস, ইমিটেশন জুয়েলারি, সুপারি, হার্ডওয়্যার, গ্রানাইট স্ল্যাব, তুলা, সুতা, গাড়ির চ্যাসিস, প্রকল্পের যন্ত্রপাতি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, কিসমিস, এলাচ, গোল মরিচ, লবঙ্গ, বিট লবণ, তেঁতুলের বিচি ও জিপসাম।
২৯ আগস্ট এই এসআরও সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত এসআরও অনুযায়ী এই কাস্টমস স্টেশন দিয়ে আগের পণ্য ছাড়াও আমদানিযোগ্য সকল পণ্যের (গুঁড়ো দুধ ব্যতীত) আমদানি সুবিধা উন্মুক্ত করা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোমরা কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে সকল পণ্য আমদানির সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এনবিআর আমদানিকারকদের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করেছে। এর ফলে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল কাস্টম হাউসের উপর আমদানির চাপ কমবে। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সহজতর হবে, রাজস্ব ঝুঁকি হ্রাস পাবে এবং বাণিজ্য সহজীকরণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।