ক্ষমার চেয়ে বড় গুণ আর কিছু নাই: জয়
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহত এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শোবিজের অনেক তারকাই। আবার কেউ কেউ নীরবও ছিলেন, কিংবা ক্ষমতাচ্যুত সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর পাল্টে গিয়েছে পটভূমি। যারা নিশ্চুপ ছিলেন, তাদের কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে মুখ খুলতেই নেটিজেনদের তোপের মুখে পড়ছেন। এবার সে সময়ে নীরব থাকায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ক্ষমা চাইলেন অভিনেতা ও সঞ্চালক শাহরিয়ার নাজিম জয়।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতে পারায় তিনি জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। জয় বলেন, ‘ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা না রাখতে পারার জন্য আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাই জাতির কাছে। ক্ষমার চেয়ে বড় গুণ আর কিছু নাই। আপনারা নিশ্চয়ই আমাকে ক্ষমা করবেন। সব শিল্পীর উচিত তার অবস্থান পরিষ্কার করা। আমার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।’
ভিডিও বার্তায় জয় বলেন, ‘এক সমন্বয়কে নিজেদের (শিল্পীদের) সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, তিনি খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, আপনাদের মাঝে অনেক শিল্পী রয়েছেন যারা অন্যায় করেছেন। আপনারা আন্দোলনের সময় ছাত্রদের এ আন্দোলনকে সরকারের (আওয়ামী লীগ) হয়ে অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। অনেক রকম পোস্ট করেছেন এ আন্দোলনকে থামানোর, দমানোর। চেষ্টা করেছেন সরকারকে সহযোগিতা করার, সুবিধাভোগী হওয়ার। আপনারা বাংলাদেশ টেলিভিশনে গিয়ে কেঁদেছেন অনেকেই অথচ শত শত, হাজার হাজার স্টুডেন্ট রাস্তায় গুলি খেয়ে মারা গেছেন, কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। অনেকেই তা বোঝেনি সরকারের চামচামি করেছে। সবসময় আপনারা মানুষের তোপের মুখে থাকবেন, ঘৃণার মুখে থাকবেন।’
ওই সমন্বয়কের বরাত দিয়ে জয় বলেন, ‘আপনারা শিল্পী, যাদেরকে মানুষ ভালোবাসে। আপনারা আপনাদের সংগঠন হোক, শিল্পী সমাজ হোক, সকলে একত্রিত হয়ে আপনারা জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন, ক্ষমা চান। ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আপনাদের আসলে আর কোনো পথ নেই।’
এদিকে, ক’দিন আগে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে শাহরিয়ার নাজিম জয়, জায়েদ খান ও সাজু খাদেমসহ ৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
ভিডিও বার্তায় এ বিষয়েও কথা বলেন জয়। তাঁর ভাষ্য, ‘আমার নামে মামলা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার হত্যাচেষ্টার মামলা। যেখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। আমি মামলার এজাহার পড়েছি, যেখানে লেখা আছে—২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িতে হামলা করেছি, তাকে হত্যার চেষ্টা করেছি।’
দুঃখপ্রকাশ করে জয় বলেন, ‘খুব দুঃখ পেয়েছি। জীবনে কখনও কাউকে গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পাইনি। কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদেও যাইনি। সেখানে এমন একটি ঘটনায় আমি মর্মাহত। খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার পরিবারের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছে।’
এরপর তিনি বলেন, ‘আমার কাছে সকল প্রমাণ আছে, মামলায় উল্লেখিত ১৫ এপ্রিল আমি শুটিংয়ের কাজে নেপালে ছিলাম। আমার পার্সপোটেও বিষয়টি উল্লেখ আছে। সেদিন সকাল ১১টার ফ্লাইটে নেপালে যাই। সেসময় নেপালে একটি বড় ভূমিকম্প হয়। যে ভূমিকম্পে আমি, রুনা খান আরও অনেক তারকা আটকা পড়ে। এরপর ২৬ এপ্রিল আমরা দেশে ফিরে আসি। সেই কাগজপত্রগুলো আমার কাছে সব আছে।’
সবশেষে বিগত সরকারের আমলে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছেন, সেই প্রকৃত আসামিদের বিচার দাবি করেছেন জয়।