অনুশোচনা ছাড়া রাজনীতির সঠিক ধারায় ফিরতে পারবে না আঃলীগ
নজরুল ইশতিয়াক
৫ ই আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর চেনা বাংলাদেশটা ক্রমাগত অচেনা হয়ে উঠছে। উন্মুক্ত হয়ে পড়ছে, সমাজ- রাজনীতির মাঠে লুকিয়ে থাকা বিভিন্ন গোষ্ঠীর চরিত্র। কত শত মুখ ও মুখোশ। কোনটা যে মুখ আর কোন টা মুখোশ তা অনেকের কাছেই অজানা ছিল এতকাল। একটি বিশেষ ঘটনা পুরো পরিস্থিতিকেই তথা স্বরূপকেই জানিয়ে দিচ্ছে। নতুন করে ইতিহাস লেখার নামে এমন সব ন্যারেটিভ দাঁড়ানো হচ্ছে, যা এতদিন কল্পনাও করেনি অনেকে। আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল ভাবতেও পারেনি নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ, জাতির জনক, সাত মার্চ ইস্যু সহ অনেক কিছু নিয়ে এইভাবে কথা উঠবে। এটি যে উঠবে কেবলমাত্র যারা গভীরভাবে সমাজ বিশ্লেষণ করেন তারাই উপলব্ধি করতেন। কিন্তু আমাদের বুদ্ধিজীবী শ্রেণী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব এতটাই অগভীর ভাসমান পানা যে, এরা সমাজের তলদেশের সন্ধান জানেন না। এসব সুশীল- বুদ্ধিজীবীরা সব সময় কোথায় কি পাবেন, কোথায় গেলে ক্ষমতার স্বাদ নেয়া যাবে এসব নিয়েই ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। ফলে তারা সত্য উপলব্ধির ন্যূনতম পর্যায়ে যেতে পারেননি। উপরন্তু দলদাসে পরিণত হয়েছিলেন। তারা নিজেরা যেমন অন্ধ, দলদাস, উন্মাদ শ্রেণির অংশ হয়েছিলেন, তেমনি তাদের ছত্রছায়ায় যারা ছিলেন তারাও একই অবস্থা, একই রং ধারণ করেছেন। একটি দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ এরূপ ভন্ড হয়ে উঠলে যা হয় তাই হয়েছে। এরা চরম ক্ষতি করেছে। দল হিসাবে আওয়ামী লীগ বাস্তবতা বর্জিত খোয়াড়ে পরিনত হয়েছিলো এদের কারণে। সত্যিকারের পরিবর্তন বিরোধী কোন শক্তিই টিকে থাকে না। পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটিকে বাধাগ্রস্ত করা হলে তা তুমুল শক্তিতে বাধা অপসারণ করে। আবার কোন গোষ্ঠী শক্তিও দীর্ঘদিন ধরে শক্তি সঞ্চয় করে কোন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত আঘাতকে অনিবার্য করে তুলতে পারে। এসবই বিশ্লেষণ করার সময় এসেছে এই সত্য উপলব্ধি করার নাম শিক্ষা, এটিই দর্শন। কিন্তু আমরা সেটি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছি। মানুষের মনের কথা বুঝতে সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। শুধুমাত্র বিশেষ সিন্ডিকেট তৈরি করে ক্ষমতায় থাকার ফল কেমন হতে পারে,তা-ই দেখলো পুরো জাতি। আজকে যা হচ্ছে তা মঙ্গলগ্রহ থেকে পাওয়া নয়, এটি আমাদের কর্ম ফল। বহুক্ষেত্রে বিভাজিত সমাজেরই ফসল। এখানে নজর দিতে হবে। এবং রাজনীতিতে ফিরতে হলে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে অনুশোচনা-উপলব্ধির জায়গায় আসতে হবে। যত দ্রুত অনুশোচনা, আত্মকর্ম বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে নিজেদেরকে পরিবর্তনের ধারায় সম্পৃক্ত করবে, ততই মঙ্গল। এত দিন বিএনপি, জামাতের দোষ ধরার ফাঁদ পেতে নিজেরাই কেন মহা অজ্ঞ হয়ে উঠলো,সেটা অনুসন্ধান করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কার্ড কিংবা ডিজিটাল- স্মার্ট বাংলাদেশ নামক কার্ড যে একটি ফাঁকিবাজী জনগণ বুঝে গেছে। আর আমি করেছি,আমি করেছি,আমার বাবার স্বপ্ন – এসব আমিত্বের আবরণের বাইরে আসতে হবে। পরিবারতন্ত্রকে জনগণ ছুঁড়ে ফেলেছে ৫ আগস্ট। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া তৈরীতে হলে এমনটি হতো না। একটু স্পেস দিলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত। ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন নির্বাচন খেলার খেসারত তো দিতেই হবে। রাজনীতিকে রাজনীতি নামক মূল্যবোধ- দর্শন দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে। অন্যদেরকে নয়, সবার আগে নিজেদেরকে দেখতে হয়। শুধু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলে পার পাওয়া যাবে না।
নজরুল ইশতিয়াক
প্রধান সম্পাদক
সাপ্তাহিক কাগজ কলম